Friday, September 14, 2018

ডিআইয়ের নির্দেশিকা ঘিরে বিভ্রান্তি উত্তর দিনাজপুরে

ডিআইয়ের নির্দেশিকা ঘিরে বিভ্রান্তি উত্তর দিনাজপুরে

রায়গঞ্জঃ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের নির্দেশিকা ঘিরে আবার বিতর্ক দানা বাধল উত্তর দিনাজপুরে। আজ এক নির্দেশিকায় জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকরা (মাধ্যমিক শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা) উভয়েই প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সমস্ত স্কুলগুলিকে জানিয়েছেন যে ৩০ শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদেরকে সংখ্যালঘু শ্রেণিভূক্ত প্রতিটি ছাত্রছাত্রী যাতে প্রি/পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপের জন্য আবেদন করে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে এবং ৩০ শে সেপ্টেম্বরের পরে নিজ নিজ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে যে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীই প্রি/পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপের জন্য আবেদন করেছে।

এখানেই দানা বেধেছে যাবতীয় প্রশ্ন। প্রথমত, স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা না করা একজন ছাত্রের ইচ্ছাধীন বিষয়। সে যদি চায় যে সরকারি কোনো অর্থ সাহায্য সে নেবেনা, কারণ তার পড়াশুনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট আর্থিক সংগতি আছে, তাহলে সে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করবে কেন? একজন শিক্ষক তাকে সরকারি অনুদানের কথা জানাতে পারেন মাত্র। কিন্তু সে সেই অনুদান নিতে ইচ্ছুক নাও হতে পারে। তাহলে একজন শিক্ষকের কী করণীয় থাকতে পারে? সুনির্দিষ্ট করে বিজ্ঞপ্তিতে কিছুই বলা নেই সে ব্যাপারে। দ্বিতীয়ত, বেশিরভাগ প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক স্কুলেই কোনো কম্পিউটার নেই। নেই কোনো ইন্টারনেটের ব্যবস্থা। বহু জায়গায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক পর্যন্ত ঠিকঠাক মেলে না। তাহলে সেক্ষেত্রে শিক্ষকরা কী করবেন, তাও তারা বুঝতে পারছেন না।
শিক্ষক মহলের দাবি অনুযায়ী, তারা বহুবার ছাত্রছাত্রীদের এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে বলেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে বেশিরভাগই এই আবেদন করতে ইচ্ছুক নয়। কারণ হিসেবে তারা তাদের পূর্বের অভিজ্ঞতার কথাই বলছে। এই অনলাইন আবেদন চালু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সাইবার ক্যাফে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ৮০ থেকে ১০০ টাকা করে নেয়। কিন্তু বছর শেষে দেখা যায়, তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একটি টাকাও ঢোকেনি। স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে অসন্তোষ ও অনীহা। শিক্ষকদের মতে, এই অসন্তোষের বেশিরভাগটাই তাদের সহ্য করতে হয়। কারণ অভিভাবকদের ধারণা, টাকা শিক্ষকদের তরফেই নয়ছয় করা হয়। অথচ, কার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকল, সে বিষয়ে শিক্ষকরা প্রায় কিছুই জানেননা।
শিক্ষকদের আরও মত, আবেদন করতে গেলেই ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল নাম্বার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এবার মোবাইলটিও আনতে হচ্ছে। কারণ ব্লক অফিস থেকে কিছু সংস্থাকে বেসরকারিভাবে আবেদনপত্র প্রতি ৩০ টাকায় কাজ করে দেওয়ার বরাত দেওয়া হয়েছে। তারা স্কুলে গিয়ে আবেদন করার চেষ্টা করলেও তা মাঝপথে আটকে যাচ্ছে, কারণ বাচ্চারা কেউই মোবাইল ব্যবহার করেনা। যে নাম্বার দেওয়া হচ্ছে, সেই নাম্বারের মোবাইলটি বাড়িতে রাখা। অথচ সেইটিতেই ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড যাচ্ছে। যেটা ছাড়া আবেদন অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। শিক্ষকদের নিজেদের মোবাইল নাম্বার দিলেও একটি নাম্বারে একবার বা দুবার ওটিপির মেসেজ আসছে। তার চেয়ে বেশি হলেই আর আসছে না। সমস্যা বাড়ছে একই পরিবারে ৫ জন শিশু ও একটিমাত্র মোবাইল থাকলেও। সেক্ষেত্রেও একটি বা দুইটি শিশুর আবেদন করার পর আর আবেদন করা যাচ্ছেনা।
শিক্ষকদের মতে, বিডিও ও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক উভয়েই এই সমস্যাগুলোর ব্যাপারে অবগত। প্রাথমিক স্কুলগুলির বেশিরভাগ শিক্ষকদেরই ডিও/বিএলও- এর কাজের জন্য তুলে নেওয়া হয়েছে। স্কুলে শিক্ষক থেকেও নেই। তা সত্ত্বেও শিক্ষকদের ওপর এমন বাড়তি দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া ও নির্দেশিকা জারি করে রীতিমতো ভীতি প্রদর্শন রাজ্যের আমলাতন্ত্রের ঔদ্ধত্যপূর্ণ দিককেই নির্দেশ করে। সবচেয়ে বড় বিষয়, যে স্কলারশিপের আবেদন করা ছাত্রছাত্রীদের ইচ্ছাধীন, সেখানেও শিক্ষকদের হস্তক্ষেপ করতে বলে আমলারা আসলে ভারতীয় নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারেই হস্তক্ষেপ করছেন। তাই তাদের মতে, এই নির্দেশিকাটি সম্পূর্ণ বেআইনি।

No comments:

Post a Comment