Friday, September 21, 2018

সারারাত ঈশ্বরের বিগ্রহের সামনে গুলিবিদ্ধ ছেলের জন্য এক অসহায় মায়ের প্রার্থনা, সাত সকালে ছেলের মৃত্যুর খবরে আছড়ে পড়লো শোক

সারারাত ঈশ্বরের বিগ্রহের সামনে গুলিবিদ্ধ ছেলের জন্য এক অসহায় মায়ের প্রার্থনা, সাত সকালে ছেলের মৃত্যুর খবরে আছড়ে পড়লো শোক

ইসলামপুর : যে ছেলেটি সবার বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তো সেই ছেলেটি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়লো। যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে বারো ঘন্টার মাথায় সে ছেলেটি চলে গেল অন্য এক অপার্থিব ঠিকানায়। কিন্তু কেন ওকে গুলি করা হলো? কেন নিরপরাধ একটি ছেলেকে তার মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো? ওকে এত অমানবিক ভাবে কোন অপরাধের শাস্তি দেওয়া হলো? কান্নার রোলে প্রলাপ বকতে বকতে সদ্য সন্তান হারা মা ঝর্ণা বর্মন দিনভর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেই চলছেন।

একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে নিজেকে ভিখারী বলে পরিচয় দিয়ে খুনিদের ফাঁসির দাবি করছেন তিনি। ছেলেকে বার বার ফিরিয়ে দেবার আর্জি জানিয়ে বুক চাপড়াচ্ছেন ওই সন্তান হারা মা। শান্তনা দিতে এসে কান্নার রোলে মিশে গিয়েছে প্রতিবেশীদেরও বিষণ্ণ উচ্চারণ। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ব্লকের পন্ডিতপোতা দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের দারিভিট গ্রামে শুক্রবার সকালে তাপস বর্মনের (২০) মৃত্যুর খবর আসতেই গোটা গ্রাম তাদের ওই প্রিয় মুখটির জন্য কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদেই চলছেন মৃত তাপসের প্রিয় বন্ধুর মা পূর্ণিমা মজুমদার। তিনি তার ছেলেকে খুঁজতে এসে দেখেন পুলিশের এলো পাথারি গুলিতে জখম একের পর এক। পরে তিনি কোনও এক মাধ্যমে শুনতে পান পুলিশ নাকি গুলি চালায়নি। তবে কি ছাত্ররা গুলি চালিয়েছে? এই প্রশ্ন তার। শুধু যে পূর্ণিমা মজুমদার তাও নয়। এই প্রশ্ন স্থানীয় ব্যবসায়ী জয় নারায়ণ পাল, মৃতর কাকা উৎপল বর্মনদের সহ অনেকরই।পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা গ্রাম। ভারত বাংলাদেশে সীমান্তের ছোট্ট গ্রাম দারিভিট।
সেখানে দারিভিট হাই স্কুলে উর্দুর শিক্ষক নিয়োগ করাকে কেন্দ্র করেই ঘটনার সূত্রপাত। বৃহস্পতিবার শিক্ষক নিয়োগের প্রতিবাদে সরব হয়ে ছাত্রদের অবরোধ, বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠলে অসংখ্য ইট পাথর বর্ষণের পর গুলি ছুটে আসে বিক্ষিপ্ত ভাবে। সেই গুলিতেই প্রথমে মৃত্যু হয় রাজেশ সরকারের। এরপর রাত পেরোতেই খবর আসে আরও একটি মৃত্যুর।
গুলি বিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকেলে তাপস বর্মনকে নিয়ে এলে তাকে পাঠানো হয় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে। সেখানে কয়েক ঘন্টা অস্রোপচার এর পর এদিন সকালে মৃত্যু হয় তাপস বর্মনের। সেখানে একমাত্র পুত্রের মৃত দেহকে আগলে বসে ছিলেন বাবা বাদল বর্মন। এই খবরে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। মৃত তাপস বর্মন ইসলামপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।এই মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান ওর সহপাঠীরাও।

No comments:

Post a Comment