ক’দিন ধরেই এলাকায় দুর্গন্ধ বাড়ছিল। কিন্তু উৎস বুঝতে পারছিলেন কেউ। সোমবার চন্দননগরের বোরো চাঁপাতলার একটি বাড়িতে ওই দুর্গন্ধের কারণ খুঁজতে গিয়ে এলাকাবাসী এবং পুলিশ থ! দাদা গোপীনাথ মুখোপাধ্যায়ের (৬৫) পচাগলা দেহ নিয়ে ন’দিন কাটিয়ে দিয়েছেন তাঁর ভাই, বছর পঞ্চান্নর অপূর্ববাবু!
এই ঘটনায় চন্দননগরে ফের রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া দেখছেন এলাকাবাসী। বছর তিনেক আগে এই শহরেরই বেশোহাটার বাসিন্দা প্রবীর পালের মৃতদেহ বেশ কিছুদিন আগলে রেখেছিলেন দাদা প্রদীপ। সে ক্ষেত্রেও দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়েই বাসিন্দারা ঘটনার কথা জানতে পেরেছিলেন। তার কয়েক মাস আগেই সামনে এসেছিল কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের পার্থ দে’র কথা। পার্থ মাস দুয়েক ধরে বোন এবং পোষ্যদের কঙ্কাল আগলে থাকতেন। তার পরেও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এমন ঘটনার কথা সামনে এসেছে। উঠেছে ওই সব লোকজনের মানসিক সুস্থতার প্রশ্ন। 
বোরো চাঁপাতলার ঘটনাটির ক্ষেত্রে অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, মৃত গোপীনাথবাবু এবং তাঁর ভাই? দু’জনেই মানসিক ভারসাম্যহীন। কেউ কোনও কাজ করতেন না। ভবঘুরে প্রকৃতির ছিলেন। এলাকাবাসীই তাঁদের খাবার দিতেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ক’দিন ধরেই এলাকায় দুর্গন্ধ পাচ্ছিলেন বোরো চাঁপাতলার বাসিন্দারা। সোমবার অপূর্ববাবুদের বাড়ির সামনে দুর্গন্ধের মাত্রা বাড়ায় তাঁদের সন্দেহ হয়। তাঁরা কড়া নাড়েন। অপূর্ববাবু বেরিয়ে এক সটান বলে দেন, ‘‘দাদা অসুস্থ। ঘুমোচ্ছেন। এখন আসা যাবে না।’’ সন্দেহ যায়নি পড়শিদের। পুলিশে খবর দেন তাঁরা। 
ওই একতলা বাড়িতে একই ঘরে দাদার সঙ্গে থাকতেন অপূর্ববাবু। তাঁরা চার ভাই। সাংসারিক অশান্তির জেরে বড় ও ছোট ভাই অন্যত্র থাকেন। গত ৪ অগস্টও এলাকার এক বাসিন্দা দুই ভাইয়ের জন্য রাতের খাবার দেন। গোপীনাথবাবুর দেহ উদ্ধারের পরে অপূর্ববাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, দাদা ঘুম থেকে না-ওঠায় অসুস্থ মনে করে তিনি আর ডাকেননি। তার পর থেকে প্রতি রাতে দাদার পাশে একই খাটে ঘুমোচ্ছিলেন! এ দিন পুলিশকেও দেহ উদ্ধারে বাধা দেওয়ার সময়ে অপূর্ববাবু বলতে থাকেন, ‘‘দাদা ঘুমোচ্ছে। এখন তোলা যাবে না।’’ 
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বাবু পাল বলেন, ‘‘বেশ কয়েক বছর আগে বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরেই দুই ভাই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তবে এমন হবে ভাবিনি। ’’